খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - আর্কাইভ - ইসলাম শিক্ষা জীবনাদর্শ | - | NCTB BOOK
741
741

হযরত খাজা মুঈন উদ্দীন হাসান চিশতী (রহ.) ছিলেন আল্লাহর একজন ওলী ও ইসলামের একনিষ্ঠ আধ্যাত্মিক সাধক। তিনি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলাম প্রচার ও প্রসারে বিশেষ অবদান রাখেন। আজ আমরা এ মহান সাধকের জীবনাদর্শ সম্পর্কে জানব।

জন্ম ও পরিচয়

খাজা মুঈন উদ্দীন চিশতী (রহ.) ৫৩০ হিজরি সনে পারস্যের ইস্পাহান নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খাজা গিয়াস উদ্দীন হাসান এবং মাতা উম্মুল ওয়ারাহ। তাঁরা ইমাম হাসান (রা.)-এর বংশধর ছিলেন। এ জন্য তাঁর মা শৈশবে তাঁকে শুধু হাসান নামেই ডাকতেন। তাঁর পিতা ইসলামের একজন মহান সাধক ও সিস্তানের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ১৫ বছর বয়সে পিতৃ ও মাতৃহারা হন। তিনি গরিবে নেওয়াজ নামে অধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন।

শিক্ষা জীবন

কুরআন মাজিদ শিক্ষার মাধ্যমেই খাজা মুঈন উদ্দীন হাসান চিশতী (রহ.)-এর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি কুরআন মাজিদ হেফয করেন। এরপর তিনি খোরাসানের বিখ্যাত আলেমদের নিকট তাফসির, হাদিস, ফিকহ, ইলম ও মারিফাতের জ্ঞান লাভ করেন। এরপর তিনি বুখারা গমন করে কুরআন, হাদিস, শরিয়াত ও মারিফাতের জ্ঞানার্জন করেন। ২২ বছর বয়সে তিনি আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর সান্নিধ্য লাভ করেন। তিনি তাঁর নিকট থেকে শরিয়াত, মারিফাত, তরিকত ও হাকিকতের বাতিনী ফায়িয লাভ করেন। ৩২ বছর বয়সে তিনি আধ্যাত্মিক পুরুষ উসমান হারুনীর (রহ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। এখানে তিনি চিশতীয়া তরিকায় দীক্ষা গ্রহণ করেন।

ভারতবর্ষে আগমন ও ইসলাম প্রচার

খাজা মুঈন উদ্দীন হাসান চিশতী (রহ.) স্বপ্নযোগে মহানবি (সা.)-এর নির্দেশ পেয়ে ভারতবর্ষে আগমন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ৯০ লক্ষ লোক ইসলাম গ্রহণ করে বলে জানা যায়। তিনি ভারতের আজমিরে এসে ইসলামের আলো ছড়ানোর সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি মারিফাত চর্চার নামে সমাজ-সংসার ত্যাগ করেননি। তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য আজমির, বাদায়ুন, বেনারস, কনৌজ ও বিহার প্রভৃতি স্থানে খানকাহ প্ৰতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ভারতের বর্ণ প্রথার অমানবিকতা থেকে নিম্ন বর্ণের মানুষদের রক্ষার চেষ্টা করেন।

ইন্তেকাল

ইসলামের এ মহান সাধক ৬৩২ হিজরী ৬ রজব ইন্তেকাল করেন। ভারতের আজমিরে তাঁর মাজার রয়েছে।

আমাদের জন্য শিক্ষণীয়

খাজা মুঈন উদ্দীন হাসান চিশতী (রহ.) অত্যন্ত সরল জীবনযাপন করতেন। তিনি ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা ও সমাজকে কখনও আলাদাভাবে চিন্তা করতেন না। এ জন্য তিনি সমাজ-সংসার ও রাজনীতির সাথেও যুক্ত থেকে মানব কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি একাধারে একজন সাধক, শাসক ও যোদ্ধা ছিলেন। আমরা তাঁর জীবনচরিত থেকে শরিয়াতের চর্চার মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা চর্চার শিক্ষা পাই।

দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা খাজা মুঈন উদ্দীন হাসান চিশতী (রহ.)-এর চরিত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবে এবং নিজেদের জীবনে অনুশীলন করবে।

এই অধ্যায়ে আমরা যেসকল ব্যক্তি সম্পর্কে জানলাম তাঁরা প্রত্যেকেই উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তাদের জীবন থেকে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু রয়েছে। এখন তোমার কাজ হল সপ্তম শ্রেণিতে যে জীবনাদর্শগুলো তুমি পাঠ করলে সেগুলো থেকে কোন কোন নৈতিক এবং মানবিক গুণাবলি তুমি খুঁজে পেয়েছ তা নির্ণয় করা এবং সেগুলো নিজের জীবনে চর্চা করার পাশাপাশি অন্যকে চর্চা করতে অনুপ্রাণিত করা। এই কাজটি কিভাবে করবে তা শিক্ষক তোমাদের বুঝিয়ে দিবেন।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion